প্রকাশিত: Wed, Dec 28, 2022 3:52 PM
আপডেট: Sun, Jun 29, 2025 9:16 PM

মেট্রো লাইফ ইন টুইন সিটি এবং ঢাকা মেট্রোরেল

মিরাজুল ইসলাম

সত্যি বলতে কী সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত কারণে মিস করছি ঢাকা মেট্রোকে। প্রবাসে আসার পর পদ্মা সেতুকেও এতোটা মিস করিনি। সেই ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি, কলকাতাবাসীর অন্যতম গর্ব তাদের মেট্রো ট্রেন। পাশাপাশি ট্রাম লাইনের জন্যও তারা বিখ্যাত। যেবার প্রথম কলকাতা গেলাম ১৯৯১ সালে মূলত তিনটি জিনিস পরখ করতে চেয়েছিলাম। বড় পর্দায় ডলবি সাউণ্ড সিস্টেমে সিনেমা, জীবনানন্দ দাশের স্মৃতি স্মারক ট্রাম এবং মেট্রো ট্রেন, যাকে কথ্য ভাষায় বলে পাতাল রেল। একমাত্র ট্রাম লাইন ছাড়া বাকি দুটোই এখন ঢাকায় উপস্থিত। বিশেষ করে মেট্রো চালুর মাধ্যমে বাংলাদেশি মধ্যবিত্ত জীবনধারার যেন যুক্ত হলো এক নব্য রোমান্টিসিজম। পরবর্তী সময়ে মেট্রো ট্রেনের অভিজ্ঞতা পাই দিল্লি এবং সিঙ্গাপুরে। কলকাতা থেকে দিল্লি এবং দিল্লি থেকে সিঙ্গাপুরের মেট্রো পরিবেশ অনেক ভিন্নতর। সে আলাপ অন্যত্র। 

শুনেছি শুরুতে আপাততো নির্দিষ্ট কিছু গন্তব্যে দাঁড়াবে ঢাকা মেট্রো। পুরো শহরে চালু হবার আগে মেট্রো-কালচার শিখতে হবে ঢাকাবাসীকে। এই মেট্রো সংস্কৃতি চলমান বাস সার্ভিস কিংবা শাটল ট্রেন থেকে অনেক আলাদা তা নিশ্চয় কিছুদিনের মধ্যে জেনে যাবেন অনেকে। আমি এখন যেখানে আছি সেই মিনিয়াপলিস ও সেন্ট পল মেট্রো ট্রেনের শহর। মূলত দুই প্রধান রুটে মেট্রো ট্রেন চলে এখানে। মিনিয়াপলিস ডাউনটাউন থেকে সেন্ট পল ডাউনটাউন পর্যন্ত ব্লু লাইন চালু হয়েছে ২০০৪ সালে। গ্রীন লাইন চালু হয়েছে ২০১৪ সালে। পাশাপাশি দুই শহরের মধ্যে মোটামুটি ১২ মাইল এলাকা ভ্রমণ করা যায়। মূল শহরের বাইরে আরও কিছু লোকালয়ে এই সার্ভিস সম্প্রসারণ করার কাজ চলছে। 

বাস্তবতা হলো, একপ্রকার বিনা ভাড়ায় চড়া যায় মিনিয়াপলিস-সেন্ট পলের মেট্রো রেলে। প্রতিটি স্টেশনের প্রবেশপথ সম্পূর্ণ খোলা। কলকাতা, দিল্লি কিংবা সিঙ্গাপুর মেট্রোতে অবশ্য প্লাটফর্মে ঢোকার মুখেই টিকিট পাঞ্চ সিস্টেম আছে। কিন্তু মিনিয়াপলিস-সেন্ট পল টুইন সিটির কোনো স্টেশনেই ঢোকার মুখে স্বয়ংক্রিয় টিকিট চেক সিস্টেম নেই। শুধু একটা সেল্ফ চেক-ইন কাউন্টার মেশিন আছে।

 যদিও খুব কম মানুষকে  সেখান থেকে টিকিট কাটতে দেখেছি। ইচ্ছে করলে পুরো মাসের মান্থলি টিকিট কিনতে পারেন। ট্রেনের ভেতরও টিকিট পাঞ্চ করার কোনো সিস্টেম নেই। বাস সার্ভিসে তা আছে শুধু। তার মানে টুইন সিটির মেট্রোতে আপনি বিনা পয়সায় যাতায়াত করতে পারবেন। অথচ কখনো প্রবল ভিড় কিংবা কলকাতা-দিল্লির মতো গাদাগাদি করে যাত্রী বহন করতে দেখিনি এখানে। সাকুল্য পাঁচ/ছয়বার রাতের আঁধারে মিনিয়াপলিস ডাউনটাউন মেট্রোতে চড়ার অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে। প্রতিবার সময় এবং খরচ বাঁচাতে উঠতে হয়েছিলো। প্রতিবার নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছি। বিশেষ করে লক্ষ্য করেছি সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত বাড়লে শ্বেতাঙ্গ যাত্রীরা পারতপক্ষে ডাউনটাউন মেট্রো এড়িয়ে চলে। রাতের মেট্রোর অন্য চেহারা তখন। পুরো কম্পার্টমেন্ট গাঁজার গন্ধে ভরে ওঠে। প্রতিটি বগির শেষভাগের সিটগুলো কৃষ্ণাঙ্গ ও হিস্পানিক হোমলেসদের আড্ডাখানা হয়ে ওঠে। দল বেঁধে তারা ট্রেনে উঠে কোন কারণ ছাড়াই নাচানাচি শুরু করে দেয়। বোঝা যায় মাদকের নেশায় সবাই টাল। নারী-পুরুষ একসাথে থাকলে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে প্রকাশ্যে চুমু খাওয়া কোনো বিষয় নয়। কেউ আবার লাউডস্পিকারে গান শোনে আপন মনে। কেউ কেউ বিচিত্র ভঙ্গিতে গা হাত পা দোলায়। কিছুটা দূরত্বে বসে হ্যাণ্ড ব্যাগটা বুকের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে তাদের তামাশা দেখি। ট্রেনের বগির ভেতর একপাশ ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হলে লাউডস্পিকারে ধূমপান নিষিদ্ধ ঘোষণার তাদের কিছু যায় আসে না।গত দুই মাস আগে একইভাবে এয়ারপোর্ট এলাকা থেকে ফেরার পথে ব্লু লাইন মাঝপথে প্রবল ঝাঁকি মেরে থেমে গেল। কিছুক্ষণ পরই সাইরেন বাজিয়ে পুলিশ এলো। জানা গেল, কোনো এক মাতাল ভুল করে রেল লাইনে উঠে পড়েছে। সেই ব্যক্তি রেল লাইনের তলায় কাটা পড়েছে নাকি সে লাফ মেরে বাঁচতে পেরেছে তা খোঁজা হচ্ছে। তার হদিশ পেলে আবার ট্রেন ছাড়বে। খবরটা জানার পর গাঁজা খেয়ে হাই হওয়া এক দল শাদা কিশোর-কিশোরী সমস্বরে চিৎকার করে উঠলো, ‘.. ওহ শীট’। হ্যাপি ঢাকা মেট্রো। লেখ ও চিকিৎসক